টেকসই কৃষির জন্য প্রয়োজন রোবোটিকস: বাকৃবি

Spread the love

প্রতিনিধি, বাকৃবি: টেকসই কৃষির জন্য রোবোটিকস প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক একেএম আবদুল্লাহ আল-আমিন। কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন, ক্রমাগত খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা ও অপরিকল্পিত কৃষির ফলে সৃষ্ট পরিবেশের হুমকি বিষয়ে আলোচনার একপর্যায়ে তিনি এ কথা বলেন।

একেএম আবদুল্লাহ আল-আমিন বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হার্পার অ্যাডামস বিশ্ববিদ্যালয়ে এলিজাবেথ ক্রিক ফেলো হিসেবে ‘ফসল উৎপাদনে স্বায়ত্তশাসিত কৃষি রোবোটিকসের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ বিষয়ে পিএইচডি করছেন।

তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত কৃষি রোবোটিকস বলতে এমন মেকাট্রনিক যন্ত্রকে বোঝায়, যা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পূর্ব নির্ধারিত পথ পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষি কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। এজন্য কোনো চালকের দরকার হয় না। শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণে মানুষের সামান্য তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়। মূলত টেকসই কৃষির জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহƒত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলো শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সুযোগ ব্যয় বিবেচনায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করেছে। কিন্তু ক্রমাগত কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা, ছোট বা খণ্ডিত আকারের জমি, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও পরিবেশের অবনতি হচ্ছে, যা কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিবেচনায় কৃষি রোবোটিকস ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

একেএম আবদুল্লাহ আল-আমিন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত যান্ত্রিকীকরণে ছোট জমিতে সময় ও শ্রমিক বেশি প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে কৃষি রোবোটিকস ব্যবহারে নেট রিটার্ন অনেক বেশি পাওয়া যায়, যা জমির আকারের ওপর নির্ভর করে না। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রচলিত কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে ইকোনমিজ অব সাইজের সুবিধা কম। পক্ষান্তরে কৃষি রোবোটিকস ব্যবহারে টনপ্রতি প্রায় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। ছোট জমিতে রোবোটিকস ব্যবহার অনেক লাভজনক ও বড় জমিতে অনেক রোবোটিকস একসঙ্গে ব্যবহার করা লাভজনক।

বাংলাদেশের কৃষিতে রোবোটিকসের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে এই গবেষক বলেন, বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ ব্যয় বিবেচনায় লাভজনকভাবে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের দিকে যেতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের জমিগুলো ছোট আকারের ও খণ্ডিত। রোবোটিকস ব্যবহারে জমির আকারের কোনো পরিবর্তন করতে হবে না। এছাড়া কৃষি রোবোটিকসের ফলে কম ইনপুট দরকার হয়। অর্থাৎ শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত ইনপুট সাশ্রয় হয়। এক্ষেত্রে ইনপুটে সরকার যে ভর্তুকি দেয় তা কমিয়ে আনা সহজ হবে। অন্যদিকে নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত পাওয়া সহজ হবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে। এতে পণ্যের বাজার সম্পর্কে আগেই ধারণা করা যাবে ও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে।

তিনি বলেন, কৃষি রোবোটিকস ছোট আকারের হওয়ায় মাটির কম্পেকশন কম হবে। কারণ প্রচলিত যান্ত্রিকীকরণে মাটির কম্পেকশন বেশি হয়, যা ফসল উৎপাদনের অন্তরায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির কম্পেকশন কমানো গেলে উৎপাদন পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।

অধ্যাপক একেএম আবদুল্লাহ আল-আমিন আরও বলেন, কৃষি রোবোটিকস ব্যবহারে ব্যাস্টিক ও সামস্টিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। যুবসমাজ কৃষিকে স্মার্ট পেশা হিসেবে নেবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। কৃষিতে অ্যাপভিত্তিক সার্ভিস শেয়ারিং সেবা চালু করা যাবে। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক হবে। যেখানে মেকাট্রনিক প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদ একসঙ্গে কাজ করবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষি রোবোটিকস ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকে টেকসই ও বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করা সম্ভব। এ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করবে। এভাবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কৃষি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।